ব্লাডি মুনের অগ্নিঝরা রূপ আজ খালি চোখে দেখা যাবে দেশের আকাশে

বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে বিচিত্র সব ঘটনা। তবে ৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজ রাতেই ঘটতে যাচ্ছে মহাজাগতিক এক বিরল দৃশ্য।

. রক্তিম রূপে বিরল চন্দ্রগ্রহণ আজ রাতে দেখা যাবে আকাশে

আজ পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে আলিঙ্গন করবে। ধীরে ধীরে যেন রাতের আঁধারে হারিয়ে যেতে শুরু করবে এটির চিরচেনা সেই রূপ। তবে এই অন্ধকারে চাঁদ হারিয়ে যাবে না। বরং রূপ বদলে পরিণত হবে এক রক্তিম লাল গোলকে। ঠিক যেন আগুনে দগ্ধ লালচে আলোয় ঝলসে ওঠা এক অদ্ভুত রূপকথার চাঁদের মতো। 

বিজ্ঞানের ভাষায় এই মহাজাগতিক রূপান্তর কেই বলা হয় ব্লাড মুন। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, কীভাবে এত উজ্জ্বল চাঁদ হয়ে ওঠে রক্তিম লাল ও। কখন, কোথায় কীভাবে দেখা যাবে এই মহাজাগতিক মায়াজাল? 

ব্লাড মুন শুধু একটি চন্দ্রগ্রহণ নয়, এটি একটি রহস্যময় দৃশ্য। যেখানে আকাশে লেখা হয় এক কাব্যিক গল্প। পৃথিবী, সূর্য আর চাঁদ তিনটি মহাজাগতিক বস্তু যখন এক সরলরেখায় আসে তখনই ঘটে এই মহাজাগতিক ছায়ার খেলা। সূর্যের আলো তখন আর সরাসরি চাঁদে পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমন্ডল সূর্যের আলোকে ভেঙে বাঁকিয়ে রঙ বদলে দিয়ে সেই আলো ছুঁড়ে দেয় চাঁদের গায়ে। তখনই চাঁদ ধারণ করে বহু আলোচিত লালচে কমলা এক বর্ণ, যা দেখতে মনে হয় যেন আকাশে জ্বলছে এক রক্তিম আগুন। 

. ৮২ মিনিট দেশের আকাশে দেখা যাবে এই মহাজাগতিক ঘটনা

২০০০ সালের পর বাংলাদেশের আকাশেও এবার এই গ্রহণ দেখা যাবে একেবারে স্পষ্টভাবে। রাত ৯টা বেজে ১০ মিনিটে শুরু হবে প্যানোরামা। ছায়ার নরম ছোঁয়া এসময় চাঁদে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে এক অদ্ভুত মানসিকতা। ঠিক যেন কোন গল্পের শুরু। তারপর ১০টা ২৭ মিনিটে শুরু হবে চাঁদের আংশিক ঢেকে যাওয়া। যার মাধ্যমেই পৃথিবীর গাঢ় ছায়া ছুঁয়ে ফেলবে চাঁদকে।

এরপর থেকেই মিনিটে মিনিটে পাল্টাতে শুরু করবে মহাজাগতিক এই ঘটনার দৃশ্যপট। তবে মূল দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে রাত এগারোটা ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত। তখনই শুরু হবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। আকাশে ঝুলে থাকা চাঁদ আর উজ্জ্বল থাকবে না। বরং জ্বলে উঠবে রক্তের মতো লাল বর্ণে। আর এই অবস্থা স্থায়ী হবে প্রায় ৮২ মিনিট। এর মাধ্যমেই একটানা ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ধরে পৃথিবীর ছায়া গিলে রাখবে চাঁদকে। যার ফলে এটি বদলে যাবে এক রক্তলাল অগ্নিগোলক। সবশেষ রাত বারোটা এগারো মিনিটে পৌঁছাবে। এটি গ্রহণের শিখরে তখন চাঁদের লাল আভা হবে সবচেয়ে তীব্র, সবচেয়ে রহস্যময়ী। এরপরই শুরু হবে চাঁদের মুক্তি। 

ধীরে ধীরে পৃথিবীর ছায়া সরে যেতে শুরু করবে। যার মাধ্যমে রাত বারোটা ৫২ মিনিটে শেষ হবে পূর্ণগ্রাস। আর রাত ১২টা ৫৬ তে শেষ হবে আংশিক ছায়ার খেলাও। অবশেষে দুইটা পঞ্চান্ন মিনিটে শেষ হবে এই মহাজাগতিক উপাখ্যান। 

তবে মজার বিষয়টি হচ্ছে চাঁদের এই পুরো দৃশ্যই দেখা যাবে খালি চোখে। কোন প্রকার চোখের সুরক্ষা দরকার নেই। লাগবে না কোন ফিল্টারও। শুধু প্রয়োজন হবে খোলা আকাশ। একটু ধৈর্য আর একটু কৌতুহল। যা থাকলেই উপভোগ করা যাবে চাঁদের এই নান্দনিক দৃশ্য। তবে শহরের আলো, গাছপালা, দালান কোঠা থেকে দূরে উঁচু কোন জায়গায় গেলে এই দৃশ্য হবে আরও জীবন্ত, আরও স্পষ্ট। 

আজকের রাতের এই দৃশ্য শুধুই একটি চন্দ্রগ্রহণ নয়, এটি এক মহাজাগতিক স্মরণীয় মুহূর্ত। যখন আকাশে দেখা যাবে লাল চাঁদ। যাকে বিজ্ঞানীরা বলে ব্লাড মুন। এই রঙ শুধু আলো নয়, এই রঙ ইতিহাস। এই রঙ, আবেগ আর এই রঙে লুকিয়ে থাকে মহাবিশ্বের নিঃশব্দ কাব্য।

Next Post Previous Post
📢 আপনার ব্র্যান্ড/প্রতিষ্ঠানের কথা জানুক হাজারো অনলাইন পাঠক আজই বিজ্ঞাপন দিন 🛍️
DMCA.com Protection Status