জ্বীন-জাদু ও বদ নজরের লক্ষ্মণ ও আত্মরক্ষার উপায় জেনে নিন

দ নজর, জিন ও কালো জাদুর প্রভাব-উপদ্রব কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা প্রমাণিত। সকল আলেমও এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। স্বয়ং রাসুল (সা.) কালো জাদুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং বলেছেন, 'বদ নজর সত্য।'

| জ্বীন-জাদু ও বদ নজর মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়

বদ নজর, জিন-শয়তান ও জাদু সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাজে মহামারীর মতো ছড়িয়ে আছে। অসংখ্য জীবন ও পরিবার এর ভুক্তভোগী।

🔸বদ নজর এবং জ্বীন-জাদুতে আক্রান্ত হওয়ার কিছু আলামত🔸

  • আজান ও কুরআন তেলাওয়াত অসহ্য লাগা।
  • রুকইয়ার আয়াত শোনার সময় বেহুঁশ বা অস্থির কিংবা অস্বাভাবিকতা অনুভব করা।
  • ভীতিকর ও অস্বাভাবিক স্বপ্ন বেশি দেখা।
  • অস্বাভাবিক কথা বলা ও আচরণ করা।
  • অস্বাভাবিক পরিমাণে হাই তোলা।
  • স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে অসহ্য লাগা এবং হঠাৎ কলহ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এসব আলামত কখনো মানসিক রোগ বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেও দেখা দিতে পারে। সেজন্য যথাযথ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাতেও কিছু নির্ণয় বা নিরাময় না হলে অথবা অস্বাভাবিক মনে হলে রুকইয়াহ করতে হবে। কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া হলো রুকইয়ার প্রধান মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, 'আমি নাজিল করেছি এমন কুরআন, যা মুমিনদের পক্ষে শেফা ও রহমত।'

🔸বদ নজর, জিন ও কালো জাদুর প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকার আমল🔸
  • সকাল-বিকালের মাসনূন আমল, বিশেষ করে হাদিসে বর্ণিত রক্ষাকবচ দোয়াগুলো মনোযোগ সহকারে প্রতিদিন পড়া।
  • বাসায় প্রবেশের সময় সর্বদা বিসমিল্লাহ বলে এবং সালাম দিয়ে প্রবেশ করা, এমনকি প্রত্যেক কক্ষে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ ও সালাম নিবেদন করা।
  • বাসায় নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা এবং যথাসম্ভব উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত করা।
  • সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা অথবা অডিও শোনা।
  • পানাহার ও অন্যান্য সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা।
  • ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি, মূর্তি ইত্যাদি প্রদর্শন না করা।
  • রাতে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা। ঘুমের সময় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার পাঠ করে উভয় হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলানো।
  • সূর্যাস্তের সময় শিশুদের যথাসম্ভব বাসার বাইরে না রাখা।
  • ঘুমানোর আগে খাবারের সকল পাত্র ঢেকে রাখা।
  • শিশুদের ছবি ও পারিবারিক একান্ত ভালো মুহূর্তগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রয়োজন ছাড়া শেয়ার না করা।
  • সকল হারাম থেকে দূরে থাকা, বিশেষ করে বাসা-বাড়ি মিউজিকের সাউন্ড থেকে মুক্ত রাখা।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার ব্যাপারে যত্নশীল থাকা।
  • টয়লেটের দরজা সবসময় বন্ধ রাখা এবং টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।
  • বাসা-বাড়ি ও আবাসনস্থল প্রস্রাব ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখা।
  • মাঝেমধ্যে রুকইয়ার অডিও চালু করে রাখা।
  • বেশি বেশি দরূদ ও ইস্তিগফার পাঠ করা।
  • সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল এবং মনোযোগী থাকা।
এই আমলগুলো নিয়মিত করলে আল্লাহর রহমতে জিন ও জাদুর প্রভাব-উপদ্রব থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে ইনশাআল্লাহ। আক্রান্ত হয়ে পড়লে প্রথমত কুরআন-হাদিসভিত্তিক দোয়া ও আমলের মাধ্যমে সেলফ রুকইয়াহ করার চেষ্টা করা উচিত। প্রয়োজনে সেলফ রুকইয়াহ বিষয়ক ভালো কোনো বই অথবা অনলাইনের নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তা সম্ভব না হলে নির্ভরযোগ্য কোনো রাকীর শরণাপন্ন হতে হবে।

বি. দ্র. বদ নজর এবং জিন-জাদুতে আক্রান্ত হওয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলে অনেক সময় সহজে নিরাময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। সুতরাং এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে রুকইয়াহ করতে বিলম্ব করা অনুচিত।
তথ্যসূত্র:
১. সূরা ফালাক: ০৫,
২. সূরা বনি-ইসরাঈল: আয়াত নং ৮২,
৩. সূরা নূর: আয়াত নং ৬১,
৪. সুরা তালাক: ০৩,
৫. সহিহ বুখারি: হাদিস নং ৩২৯, ২৩১১, ৩২২৫, ৩২৮০, ৫০০৯, ৫০২৪, ৫৬২৪, এবং  ৫০১৭০,
৬. সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ২৬৯, ৭৮০, ২০১৮,
৭. সুনানে তিরমিজি: ৬০৬ ও ৩১০০,
৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৮, 
৯. মুসনাদুল বাজ্জার: ৭৫১৩।
Previous Post
📢 আপনার ব্র্যান্ড/প্রতিষ্ঠানের কথা জানুক হাজারো অনলাইন পাঠক আজই বিজ্ঞাপন দিন 🛍️