ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যার আশংকা, ৪ উপজেলা এবং নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত টানা বর্ষণের ফলে সিলেট বিভাগের সকল নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, এখনো কোনো নদী বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।

| সিলেটে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চার উপজেলা এবং নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। ছবি: কালবেলা

জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের প্রত্যেকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ৩৭সেন্টিমিটার, ছাতক পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার, দিরাই পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। কুশিয়ার নদীর পানি সিলেটের জকিগঞ্জের আমলশীদ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার, পিয়াইন নদীর পানি সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং পয়েন্টে ১০২ সেন্টিমিটার, সারি গোয়াইন নদীর পানি জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে ৮৯ সেন্টিমিটার, গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

গোয়াইনঘাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গোয়াইনঘাট উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে নদ-নদীর পানি। অপরদিকে, বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের বেড়েছে ভোগান্তি। দিন মজুরদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে পড়েছে একেবারেই। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার জানান, ১৪ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাস ছিল। তবে, বর্তমানে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। গোয়াইনঘাট উপজেলার তিনটি পয়েন্টে সারী গোয়াইন ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি জানান, উপজেলায় শতভাগ বোরো ধান কর্তন শেষ। শুধুমাত্র সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের আওতায় আনুমানিক ৩০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা বাকি রয়েছে। বন্যা হলেও কৃষকদের বোরো ধানের ক্ষতির কোন ধরনের আশংকা নেই।

এদিকে, জাফলংয়ে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল নেমে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত। প্লাবিত হয়। নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইউনিট ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে জাফলং ডাউকি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিরাপদে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ রয়েছে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার উজ জামান জামান জানান, যে সকল উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে, সেই সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে- যাতে তারা বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি রয়েছে। শুকনো খাবার, খাবার স্যালাইন মজুদ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব উপজেলা প্রশাসনকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, সিলেটের আকাশে এখনো প্রবল মেঘ জমে আছে এবং বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক সিলেটের ডাক, মঙ্গলবার, ২১/০৫/২৫ইং

Next Post Previous Post