বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশ আদালতে স্থগিত

আমেরিকার প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে দেশটির বাইরের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা বন্ধের আদেশে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতে এ মামলা করা হয়।

| হাভার্ডের মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশ আদালতে স্থগিত

মামলার জেরে ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে স্থগিত করার আদেশ দিয়েছে ডিস্ট্রিক্ট জজ অ্যালিসন বুরজের আদালত।

মামলার আরজিতে ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে আইনের 'ভয়াবহ লঙ্ঘন' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, কলমের এক খোঁচাতেই সরকার হার্ভার্ডের মোট শিক্ষার্থীদের এক-চতুর্থাংশ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মুছে ফেলতে চাচ্ছে যারা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর মিশনে অবদান রেখেছেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ছাড়া হার্ভার্ড আর হার্ভার্ড থাকে না।

এর আগে বৃহস্পতিবার আমেরিকান অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০২৫-২০২৬ সেশন থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম।

এ নিয়ে আমেরিকায় মর্যাদাপূর্ণ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘিরে অচলাবস্থা আরো জটিল হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেন- আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় হার্ভার্ডের 'স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম' প্রত্যাহার করেছে প্রশাসন। এটি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে কাজ করুক।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ পদক্ষেপকে 'বেআইনি' অভিহিত করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, 'বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা আমাদের আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং পণ্ডিতদের সাদরে গ্রহণ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতিকে অপরিমেয়ভাবে সমৃদ্ধ করার হার্ভার্ডের সামর্থ্য বজায় রাখার ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের দ্রুত নির্দেশনা ও সহায়তা দিতে কাজ করছি। এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ড সংশ্লিষ্ট সবাইকে ও আমাদের দেশের জন্য গুরুতর ক্ষতির হুমকি তৈরি করে এবং হার্ভার্ডের একাডেমিক এবং গবেষণা মিশনকে দুর্বল করে।'

হার্ভার্ডে লেখাপড়া করছেন এমন হাজারো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে, গত শিক্ষাবর্ষে ছয় হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন হার্ভার্ডে, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭শতাংশ।

বৃহস্পতিবার হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ হঠাৎ করেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে আমেরিকাজুড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যান্য প্রধান আমেরিকান প্রতিষ্ঠানে চাপ দিয়ে আসছে প্রশাসন।

ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করে, ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার জন্য হার্ভার্ডকে তার নিয়োগ, ভর্তি ও শিক্ষাদান পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের করমুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহার এবং কোটি কোটি ডলারের সরকারি অনুদান জব্দ করার হুমকি দেয়।

চলতি বছরের শুরুতে হার্ভার্ড বলেছিল যে, তারা ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সরকারের দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান' নিয়ন্ত্রণের একটি প্রচেষ্টা। এ অচলাবস্থা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত এপ্রিলে ক্রিস্টি নোয়েম হুমকি দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি ব্যাপক রেকর্ড অনুরোধ মেনে না নিলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র ভিসা প্রোগ্রামের প্রবেশাধিকার প্রত্যাহার করা হবে।

এরপর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় হার্ভার্ডকে সতর্ক করে দেয়, যদি তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ব্যাপকমাত্রায় রেকর্ড রাখা সংক্রান্ত প্রশাসনের অনুরোধ মেনে না চলে, তাহলে তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের আতিথেয়তা দেওয়ার ক্ষমতা হারাতে পারে।

Next Post Previous Post