ভারতীয় ড্রোনের বধ্যভূমি এখন পাকিস্তান, ইসরাইল থেকে কেনা ২৯ ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত
হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে এবার ইসরাইলের তৈরি ২৯টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত দিল্লির এতগুলো ড্রোন হারানোর ঘটনাকে বড় বিপর্যয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কার্যত ভারতীয় ড্রোনের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে পাকিয়ান। এর আগে পাঁচটি ভারতীয় অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল ইসলামাবাদ।
![]() |
ভারতীয় ড্রোনের বধ্যভূমি এখন পাকিস্তান |
এ ছাড়া সীমান্তে ৫০ জনের মতো ভারতীয় সেনা হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয় দেশটির পক্ষ থেকে। উত্তেজনার মধ্যেই দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ভারত দাবি করছে, পাকিস্তান এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে 'সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে' বিমান হামলায় কমপক্ষে '১০০ সন্ত্রাসী' নিহত হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের হামলায় নিহত ভারতীয়দের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী পাকিস্থানের একাধিক স্থানে বিমান প্রতিরক্ষা রাডার এবং সিস্টেমে আঘাত করেছে। যদিও ভারতীয় ড্রোন হামলায় সামরিক স্থাপনার ক্ষতির দাবি খারিজ করে দিয়েছে পাকিস্তান। সংঘাতের মধ্যে দুই দেশের নেতারা হুজার দিয়েই যাচ্ছেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিরপরাধ শহীদদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন-হামলা হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
প্রতিবেশী দুই দেশের সংঘাত যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন তাদের মধ্যে শান্তির দূত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার জন্য ভারত ও পাকিয়ানকে 'সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমানো এবং আরো হামলা করা' থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। খবর বিবিসি, রয়টার্স, ডন, আলজাজিরা ও এনডিটিভির।
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রয় হওয়ার মধ্যে দেশটির বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত। তবে এর বড় একটি অংশ ভূপাতিত করার দাবি করছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় ড্রোনের অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা তারা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সফট-কিল (কারিগরিভাবে) এবং হার্ড-কিল (অস্ত্রের মাধ্যমে) পদ্ধতিতে ২৯টি ইসরাইলে তৈরি হেরোপ ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের ধ্বংস করা এসব ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ডিজি আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ভারতের এই হেরোপ ড্রোন পাঠানোর প্রক্রিয়াটি একটি 'গুরুতর উসকানি'।
লড়াইয়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বহু ভারতীয় সেনা হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জাতীয় পরিষদে আইন প্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ভারত ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ৪০ থেকে ৫০ জন ভারতীয় সৈন্যকে হত্যা করেছে।
তীব্র সংকটের এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানা গেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার রয়টার্সকে বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে হটলাইন চালু রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শহীদদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, আমরা আমাদের নিরপরাধ শহীদদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেব। ভারতকে বিমান হামলার পরিণতি ভোগ করতে হবে। তারা ভেবেছিল পাকিস্তান পিছু হটবে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে আমরা বীরের জাতি, আমরা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়তে প্রস্তুত।
এদিকে পাকিস্তানের হামলায় আরেকজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশটি বলছে, পাকিস্তানের হামলায় এ পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচ শিশুও রয়েছে।
এরমধ্যেই দিল্লিতে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় সর্বদলীয় বৈঠক। বৈঠকে সরকারের পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়েছেন বিরোধী নেতারা। বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা সম্পর্কে বিরোধী দলগুলোকে অবহিত করেন বলে জানিয়েছেন সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কাইরেন রিজু। তিনি জানান, বিরোধী দলের নেতারা তাদের পরামর্শও দিয়েছেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, আমরা (সব দল) বলেছি, আমরা সরকারের সঙ্গে আছি।
বৈঠকে রাজনাথ সিং জানান, পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতের চালানো অপারেশন সিঁদুরে 'শতাধিক সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে'।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, নয়াদিল্লি আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ইচ্ছুক। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কেউ আমাদের ধৈর্যের অন্যায্য সুযোগ নেবে। যদি কেউ আমাদের ধৈর্যের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে 'কড়া পদক্ষেপের' মুখোমুখি হওয়ার জন্য তাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে।
উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে পাকিস্তান যদি সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে কঠোর জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। তিনি বলেন, যদি ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
গতকাল ভারত সফরে আসা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকের পর এস জয়শঙ্কর বিবৃতিতে এ কথা জানান। তবে ভারত আর উত্তেজনা বাড়াতে আগ্রহী নয় বলে জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা উত্তেজনা বাড়াতে চাই না। তবে আমাদের বিরুদ্ধে যদি সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে আমরা খুব কড়া জবাব দেব, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এদিকে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলার দাবি করেছে ভারত। ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের একাধিক স্থানে বিমান প্রতিরক্ষা রাডার এবং সিস্টেমে আঘাত করেছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, নির্ভরযোগ্যভাবে জানা গেছে, লাহোরে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
তবে ভারতীয় ড্রোন হামলায় সামরিক স্থাপনার ক্ষতির দাবি খারিজ করে দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ রয়টার্সকে বলেন, ভারতীয় ড্রোনের আঘাতে লাহোরের সামরিক স্থাপনা বা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কোনো ক্ষতি হয়নি।
উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল রাতে ভারতের সেনাবাহিনী দাবি করে, ভারত-শাসিত কাশ্মীরের উধমপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটের তিনটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের এ অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ভারত-শাসিত কাশ্মীরে কোনো হামলার দায় তার দেশের নয়।
শত্রুভাবাপন্ন পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দুই দেশের মধ্যে সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়ার আগে তাদের থামার পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি দুটি দেশকেই খুব ভালো করে চিনি। আমি চাইব ওদের সমস্যা ওরাই সমাধান করক। আমি চাই ওরা থেমে যাক। যদি আমি কোনো সাহায্য করতে পারি, তাহলে অবশ্যই তা করব।
চলমান সংঘাতের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে 'সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমানো এবং আরো হামলা করা' থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। উভয়পক্ষকে সংলাপে বসার আহবান জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে এ আহবান জানিয়েছে জোটটি।
'ভারত ও পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বাধ্যবাধকতা মেনে চলা এবং বেসামরিক জনগণের জীবন রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ' বলে জানিয়েছে ইইউ।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। ওই ঘটনায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা রয়েছে দাবি করে গত মঙ্গলবার রাতে দেশটির বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ভারত। এতে পাকিস্তানের অন্তত ৩১ জন নিহত হন। পাল্টা হামলায় ভারতেরও বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।