গ্লুমি সানডে : এক অভিশপ্ত গান | SAYEED's Blogspot | www.thesayeeddd.online

আসুন জানা যাক, সেই গানের ব্যাপারে। একটি গান আপনার মন খারাপ করিয়ে দিতেই পারে। আপনাকে হয়তো ডুবিয়ে দিতে পারে হতাশার সমুদ্রে। কিন্তু প্রাণে মেরে ফেলবে? এটা কি করে সম্ভব!? 

গ্লুমি সানডে : যে গান শুনলে মানুষের প্রাণ চলে যেতো

শুনে অসম্ভব মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে কখনও কল্পনার সু-দূরতম গণ্ডিকে অনায়াসেই অতিক্রম করে যায়। এ যেন তেমনই ব্যাপার। তবে যাঁরা জানেন, তাঁরা এই গানটিকে ‘‘ হাঙ্গেরিয়ান সুইসাইড সং ’’ হিসেবেও চেনেন। হাঙ্গেরির বিখ্যাত পিয়ানোবাদক রেজসো সেরেস ১৯৩৩ সালে এই গানটিতে সুর দিয়েছিলেন এবং গানটি গেয়েছিলেন। 

banner

এই গানটি ঘিরে রয়েছে বহু রহস্য। যেমন; এক মহিলার কথা শোনা যায়, যিনি গানটি মিউজিক প্লেয়ারে চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন!

এক দোকানদারের সুইসাইড নোটে পাওয়া গিয়েছিল এই গানের কথাগুলো। এমন নানা ঘটনায় আবৃত একটি গান, যা চালানোর আগে অনেকেই দ্বিতীয়বার ভাবেন।

গানটি রেজসো সেরেস সুর দিয়েছিলেন এমন একটি সময়ে, যখন পেট চালাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন ও  মরিয়া হয়ে লড়াই চালাচ্ছেন।

এই গানটির নেপথ্যে একটি গল্প রয়েছে। সেরেসের পকেটে তখন একটাও কানা-কড়িও নেই। কী করে একবেলার খাবার জুটবে, সেই চিন্তা গ্রাস করেছে তাঁকে। এর উপরে বান্ধবীও ছেড়ে গিয়েছেন। এই অবস্থায় সেরেসের হাতে আসে গানটি। লিখেছিলেন তাঁরই বন্ধু, কবি লাজলো জ্যাভঁর। অনেকে বলেন, সেরেসের কষ্ট জ্যাভর অনুধাবন করেছিলেন।

অন্য ব্যাখ্যায় বলা হয়, জ্যাভঁরের বান্ধবীই তাঁকে ত্যাগ করেছিলেন। তৃতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়, মূল কবিতাটি নেমে এসেছিল সেরেসের কলম বেয়েই। সেটিকে অদলবদল করে গানের আকার দেন জ্যাভঁর।

এবারে প্রশ্ন, সত্যিই কি এই গান আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়? এই গানটি রেকর্ড করেছিলেন সংগীত পরিচালক প্যাল ক্যামার। সেই রেকর্ডিং প্রকাশিত হওয়ার পরেই হাঙ্গেরিতে পরপর আত্মহত্যা ঘটতে থাকে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং পুলিশের কাছে পাওয়া তথ্য একত্র করে দেখা যায়, হাঙ্গেরি এবং আমেরিকায় সেই সময়ে অন্তত ১৯টি আত্মহত্যার সঙ্গে এই গানটির যোগসূত্র ছিল।

তখনই হাঙ্গেরিতে গানটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। 

১৯৬৮ সালে ঘরের জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেন সেরেস নিজেই।

এখানেই ছেদ পড়েনি আত্মহত্যায়। এর পরেও খবর আসতে থাকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। জার্মানি, ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি সহ সর্বত্রই আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িয়ে যায় গানটি। 

৬৬ বৎসর যাবৎ এ গানটি বৃটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) নিষিদ্ধ করে। সর্বশেষ ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ গান নিষিদ্ধ ছিলো 

পটভূমি:

গানের মূল থিম হলো গভীর বিষণ্ণতা এবং হারানো প্রেম। রেজসো সেরেস যখন এই গানটি লিখেছিলেন, তখন তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক কঠিন সময় পার করছিলেন। তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই আবেগ থেকেই তিনি গানটি লিখেছিলেন। 

গানের কথাগুলো শুরুতে লিখেছিলেন লাজলো যাভর (László Jávor), যেখানে একজন প্রেমিক তার প্রিয়জন হারানোর বিষাদে আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেন। গানের সুর এবং কথার গভীর দুঃখ মানুষের মনে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, এটি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী একাধিক আত্মহত্যার ঘটনার সাথে গানটি জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে।

বিতর্ক ও প্রভাব:

গানে বিষণ্ণতা এতটাই গভীর ছিল যে, এটি অনেক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যেমন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

গানটির রহস্যময় প্রকৃতি এবং "আত্মহত্যার গান" হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়।

রেজসো সেরেস নিজেও ১৯৬৮ সালে আত্মহত্যা করেন, যা এই গানের প্রতি আরও কৌতূহল ও মিথ তৈরি করে।

সংস্কৃতি ও জনপ্রিয়তা:

গানটি পরবর্তীতে অনেক ভাষায় অনুবাদ এবং রেকর্ড করা হয়। বিখ্যাত গায়িকা বিলি হলিডে ইংরেজি সংস্করণে এটি পরিবেশন করেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

যদিও গানটি গভীর বিষণ্ণতা প্রকাশ করে, এটি একই সঙ্গে শিল্পের একটি অসাধারণ উদাহরণ এবং মানুষের আবেগের গভীরতার প্রতিফলন।

Next Post Previous Post
📢 আপনার ব্র্যান্ড/প্রতিষ্ঠানের কথা জানুক হাজারো অনলাইন পাঠক আজই বিজ্ঞাপন দিন 🛍️