ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু বহুকাল ধরে কিছু ব্যক্তি ধর্মকে পুঁজি করে চালিয়েছে জঘন্য ও নৃশংস কর্মকাণ্ড। এমনকি গত শতকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানায় গণআত্মহত্যা-খুনের ঘটনাটিও ঘটেছে জিম জোনস্ নামে একজন স্বঘোষিত ধর্মগুরুর প্ররোচনায় ও সরাসরি নির্দেশে।
স্বঘোষিত ধর্মগুরুর প্ররোচনায় ও সরাসরি নির্দেশে হয় জোনস্ টাউন গনহত্যা
জঙ্গল বেষ্টিত একটি প্রত্যন্ত এলাকা। নাম জোনস্ টাউন। আশেপাশে কোনো জনপদ নাই। একটা স্টেজের সামনে বসে আছেন কালো চশমা পরিহিত একজন ধর্মগুরু, নাম তার জিম জোনস্। গায়ে কোট-টাই, প্যান্ট। একটা পাটাতনের ওপর সিরিয়াল ধরে আসছে ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা, তাদের চোখ মুখে আতঙ্ক। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষরাও আসছে। তাদের চোখ-মুখে আতঙ্ক, বিষণ্নতার ছাপ। এদেরকে জোর করে স্টেজের মঞ্চের সামনের দিকে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। চারদিক ঘিরে রেখেছে ধর্মগুরুর একদল পোষা বাহিনী। তাদের হাতে রাইফেল, তাক করা। মঞ্চের সামনে দু-তিনটা বালতিতে ফ্লেভারমিশ্রিত বেভারেজের সাথে সায়ানাইড মিশ্রণ করা হচ্ছে। একটার পর একটা ইনজেকশনের প্যাকেট ছিঁড়ে সেগুলোতে ভরা হচ্ছে ফ্লেভারমিশ্রিত বেভারেজের সাথে সায়ানাইড। শিশুরা কাঁদো কাঁদো মুখে এগিয়ে যাচ্ছে আর তাদের শরীরে পুশ করা হচ্ছে সায়ানাইড। একজনের পর একজন কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
গণ-আত্মহত্যায় ব্যবহৃত সায়ানাইড মিশ্রণ ও ইনজেকশন
নারী আর শিশুরাই বেশি। শিশুরা শেষ হওয়ার পর প্রাপ্তবয়স্ক নারী, পুরুষ, বুড়ো-বুড়ি সকলের গায়ে ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে। মাইকে উত্তেজিত অবস্থায় জোরে জোরে আধ্যাত্বিক মতবাদ ও আত্নহত্যায় প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দিচ্ছেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু জিম জোনস্। এদিকে জোনস্ টাউন থেকে কয়েক কিলো মিটার দূরে একটি হেলিকপ্টারের পাশে পড়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান লিও রায়ানের লাশ। তার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরো কয়েকজন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, মানবাধিকার কর্মী, জোনস্ টাউন থেকে নিজের মেয়েকে নিয়ে যেতে আসা বাবার লাশ পড়ে আছে। তাদেরকে গুলি করেছে জিম জোনসের অনুসারী একদল পোষা বাহিনী। কিছু সময় পর জোনস্ টাউন একটি বিশাল লাশের স্তূপে পরিণত হয়। অবশেষে ধর্মগুরু জিম জোনস্ সায়ানাইডের ফলে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে নিজেও আতঙ্কিত হন। যে ডাক্তার এতক্ষণ অন্যদের শরীরে ইন্জেকশন পুশ করেছে, সে এবার তার নিজের গায়ে ইন্জেকশন পুশ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। অতঃপর জিম জোনস্ নিজের মাথায় গুলি করে আত্নহত্যা করেন। এদিকে গায়নার রাজধানী জর্জটাউনে পিপল’স টেপলের শাখায় জিম জোনসের অডিও টেপের মাধ্যমে প্রেরিত নির্দেশে সুইসাইড করেছে তার কিছু অনুসারীরা। মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়াল ৯১৮ জন। ধর্মগুরু জিম জোনসের নির্দেশে ৭০ জন স্বেচ্ছায় আত্নহত্যা করেন।
গনহত্যায় মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯১৮
পেছনের ইতিহাসজিম জোনস্ ১৯৩১ সালের ১৩ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোর বয়সে কার্ল মাক্স, স্টেলিন, মাও সেতু, গান্ধী ও হিটলার সম্পর্কে গভীরভাবে পড়াশোনা করেন। তাদের দুর্বল ও সবল দিক সম্পর্কে অবগত হন। জিম জোনসের জন্ম হয়েছিল আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি দরিদ্র পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বেশ বুদ্ধিমান এবং কিছুটা অদ্ভুত স্বভাবের। কিশোর বয়স থেকেই ধর্মের প্রতি তার টান ছিল প্রবল। সংস্কারবাদী খ্রিস্টান ধর্মীয় মতবাদগুলোর প্রতি ছিল তার বিশেষ আকর্ষণ। তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাস্তায় রাস্তায় ধর্ম প্রচার শুরু করেন। বর্ণবাদ প্রথার বিরুদ্ধে তখন থেকেই তার ছিল বলিষ্ঠ আন্দোলন। একসময় খ্রিস্টান ধর্মের সাথে কম্যুনিজম এবং সোশ্যালিজম জুড়ে দিয়ে তিনি এক নতুন ধরনের ধর্ম প্রচার শুরু করেন। জিম জোনসের স্বকীয় ধর্ম, প্রচার, কৌশল, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার কণ্ঠ, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি এবং সর্বোপরি তারুণ্যের উদ্যম খুব দ্রুতই তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। বেশ কিছু ভক্ত জুটে যায় তার। তিনি তার নতুন প্রচারিত মতবাদের নাম দেন পিপল’স টেম্পল।
জিম জোনস্ প্রতিষ্ঠিত পিপল’স টেম্পল-এর লোগো
১৯৬৫ সালে জিম জোনস্ তার অনুসারীদের ইন্ডিয়ানা থেকে ক্যালিফোর্নিয়াতে গিয়ে বসবাস করার নির্দেশ দেন। সেসময় তার বয়স ছিল ৩৫ বছরের কাছাকাছি। তিনি ধীরে ধীরে সনাতন খ্রিস্টান বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন এবং নিজেকে একজন মসিহা বা নবী বলে দাবি করা শুরু করেন। তিনি নিজেকে গৌতম বুদ্ধ ও যিশু খ্রিস্টের মতো মহাপুরুষ হিসেবে জোর প্রচারণা চালাতে থাকেন। ইতোমধ্যে জোনস্ ও তার অনুসারীরা মিলে ক্যালিফোর্নিয়াতে পিপল’স টেম্পলের একটি চার্চ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ায় পিপল’স টেম্পলের একটি চার্চ
জিম জোনস্ তার অনুসারীদেরকে নিপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। অভাবগ্রস্ত মানুষদেরকে সাহায্য করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কিভাবে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা যায় এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়নে তাদের কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন এই টেম্পলের অনুসারীরা। অবশ্য আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে নিজের দর্শনের প্রতি আকর্ষিত করাও এসব জনহিতৈষী কর্মকাণ্ডের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকা সময়েই জোনস্ একবার দাবি করে বসেন, তিনি নাকি বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক বিষয় দেখাতে পারেন। তার মধ্যে একটি ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে সারিয়ে তোলা। যদিও আদতেই তিনি কাউকে কখনো সারিয়ে তুলতে পেরেছিলেন কিনা, তার প্রমাণ মেলেনি। তবে তার ভক্তকূল এই প্রচারণাটি বেশ আনন্দের সাথেই গ্রহণ করেছিলো।১৯৭০ সালের দিকে এসে পিপল’স টেম্পল রাজনৈতিক দলগুলোর সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয়। এসময় জোনসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সখ্য গড়ে ওঠে। নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে সবসময় সোচ্চার থাকার কারণে জিম জোনস্ ও তার পিপল’স টেম্পল "অ্যাঞ্জেলা" ডেভিস এবং "হার্ভি মিল্ক" -এর মতো বামপন্থী নেতাদের এবং ব্ল্যাক প্যান্থারের মতো বিপ্লবী কৃষ্ণাঙ্গ গেরিলা সংগঠনের সুদৃষ্টি লাভ করেন। ব্ল্যাক প্যান্থারের সুদৃষ্টি থাকায় বিপুল সংখ্যক আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক পিপল’স টেম্পলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
গণ-আত্মহত্যার পরে উদ্ধারকৃত মৃতদের পাসপোর্ট
জীবনের বেশিরভাগ সময় আমেরিকায় কাটানো জিম জোনস্ কোনো এক কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় শঙ্কিত থাকতেন। তার ধারণা ছিল, খুব শীঘ্রই আমেরিকার ওপর নিউক্লিয়ার হামলা হবে। কিন্তু কেন হবে বা কারা তা করবে, সে সম্পর্কে তিনি কখনোই সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বরং এই নিউক্লিয়ার হামলার ধারণা তিনি তার অনুসারীদের মধ্যে সজোরে প্রচার করতে থাকেন। নিজের মতাদর্শ এবং অনুসারীদের রক্ষা করার জন্য তিনি সবাইকে নিয়ে আমেরিকা ত্যাগ করার পরিকল্পনা করেন। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে সবার থাকার মতো ভূখণ্ডের খোঁজ চলতে থাকে।
অবশেষে গায়ানার এক গহীন জঙ্গলের পরিত্যক্ত বিশাল একটি এলাকা পছন্দ হয় জোনসের। ১৯৭৭ সালে তিনি ও তার অনুসারীরা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দল বেঁধে রওনা হন গায়ানার উদ্দেশে। সেখানে তারা পিপল’স টেম্পলের নতুন চার্চ স্থপন করেন।
জোনস্ টাউনে পিপল’স টেম্পলের চার্চের সামনে একটি পরিবার
গায়ানার ওই জঙ্গলে একটি নতুন শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন জোনস্। তবে সরকার এবং গণমাধ্যমবিহীন ওই সমাজের প্রধান সমস্যা ছিল বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে জোনসের অনুসারীরা সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। তারা আশেপাশের বনজঙ্গল কেটে সেগুলোকে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করেন। শুরু হয় কৃষিভিত্তিক এক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা, যা পরবর্তীতে জোনস্ টাউন নামে খ্যাতি লাভ করে। জোনস্ টাউনের সদস্যদের দিনের বেলায় বাধ্যতামূলক ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। সন্ধ্যার পর থাকত জিম জোনসের বক্তৃতা শোনার পর্ব। সপ্তাহের কিছু কিছু রাতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হতো। অবশ্য চলচ্চিত্রের পরিবর্তে বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে ভীতিমূলক বিভিন্ন তথ্যচিত্রই বেশি প্রদর্শিত হতো। বাইরের সমাজের সাথে যোগাযোগ না থাকায় জোনস্ টাউনে খাদ্যের অভাব ছিল প্রবল। তার ওপর যে কোনো ভুল কাজের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা তো ছিলই।
জব্দকৃত ভীতিমূলক বিভিন্ন তথ্যচিত্রের রিল
জোনস্ টাউনে থাকা অস্থায় জোনসের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। তিনি ধীরে ধীরে বাস্তব জগত এবং কাল্পনিক জগতের মধ্যে পার্থক্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। অবশ্য এসবের পেছনে উচ্চমাত্রার ড্রাগ গ্রহণ ছিল অন্যতম কারণ। একসময় তিনি তার অনুসারীদেরকে বাইরের শত্রুর আক্রমণের ভয় দেখাতে শুরু করেন। জোনস্ টাউন গণহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা একজন বলেন, জিম জোনস্ বাহিরের পৃথিবী সম্পর্কে তাদের ভূয়া ও মিথ্যা তথ্য দিতেন। যেমন : নিগ্রোদের আমেরিকাতে ক্যাম্পে রেখে অত্যাচার করা হচ্ছে।জোনস্ টাউনে আমেরিকানদের এই কাল্পনিক আক্রমণের একটি সমাধানও বের করে ফেলেন জোনস্। আর তা হলো গণ-আত্মহত্যা! অবশ্য জোনস্ এর নামকরণ করেছিলেন ‘বিপ্লবী মৃত্যু’। তিনি তার অনুসারীদের বলেন, যদি কখনো শত্রুপক্ষ জোনস্ টাউন আক্রমণ করে, তবে সবাই যেন এই বিপ্লবী মৃত্যু স্বেচ্ছায় বরণ করে নেয়। ১৯৭৮ সালের দিকে যখন বর্ণবাদ এবং দারিদ্র্যমুক্ত জোনস্ টাউনের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন একজন আমেরিকান কংগ্রেসম্যান-লিও রায়ান, জোনস্ টাউন প্রকল্প পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৮ জন সদস্যের একটি পরিদর্শক দল নিয়ে গায়ানার উদ্দেশে রওনা হন এবং ১৭ নভেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে জোনস্ টাউনে জিম জোনস্ এবং তার অনুসারীদের সাথে সাক্ষাত করেন।জোনস্ টাউনের পরিস্থিতি কংগ্রেসম্যান রায়ানের কাছে বেশ স্বাভাবিকই মনে হয়েছিল। জোনসের অনুসারীরা যে স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করে গায়ানায় এসেছেন, তা-ও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে গায়ানা ত্যাগের আগে জোনসের কাছে নিজের সন্তুষ্টির কথা অকপটে প্রকাশ করেন তিনি।
কংগ্রেসম্যান-লিও রায়ান
কিন্তু এরপরও কংগ্রেসম্যানের এই সফর নিয়ে জোনসের উৎকণ্ঠা কাটল না। তার ভয় হচ্ছিল, যদি রায়ান আমেরিকায় গিয়ে জোনস্ টাউনের নামে কোনো বৈরি মন্তব্য করেন, তাহলে সরকার হয়তো তার গোটা জোনস্ টাউন প্রজেক্টই বন্ধ করে দিতে পারে। তা যাতে না হয়, সেজন্য জোনস্ তার সিকিউরিটি ফোর্সকে পরিদর্শক দলের ওপর হামলা করার জন্য পাঠান। পরিদর্শক দল যখন গায়ানার বিমানবন্দরে পৌঁছে, তখন তাদের ওপর হামলে পড়ে জোনসের বাহিনী। তাদের হামলায় চারজন পরিদর্শক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে কংগ্রেসম্যান লিও রায়ানও ছিলেন। তিনি মোট ২০টি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
বিমানবন্দরে জোনসের অনুসারীদের হামলার পর বিধ্বস্ত বিমান
আমেরিকান কংগ্রেসম্যান নিহত হয়েছেন। এখন তো জোনস্ ও তার পিপল’স টেম্পলের বাঁচার কোনো রাস্তা নেই। আমেরিকান সরকার অবশ্যই তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাবে। তাই এই গ্রেফতার এবং গ্রেফতার-পরবর্তী নির্যাতন এড়াতে জোনস্ তার অনুসারীদেরকে গণ-আত্মহত্যার নির্দেশ দেন। তবে একজন নারী অনুসারী এর আংশিক বিরোধিতা করে বলেন, “মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। মরতে আমি রাজি আছি। কিন্তু আমাদের বাচ্চাদেরকে বাঁচার সুযোগ দেওয়া হোক।” উত্তরে জোনস্ বলেন, “বাচ্চাদের শান্তি প্রয়োজন। আমেরিকান বাহিনী আমাদের সাথে যা করতে যাচ্ছে, তা দেখার চেয়ে তাদের মৃত্যুবরণ করাটাই শ্রেয়।” জোনসের নির্দেশে সায়ানাইড মিশ্রিত একধরনের পানীয়ভর্তি ড্রাম নিয়ে আসা হয় চার্চ প্রাঙ্গণে। একে একে সবাই সেই পানীয় পান করে এবং ইনজেকশনে শরীরে প্রবেশ করিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। শিশুরাও বাদ যায়নি। তাদের শরীরেও ইনজেকট্ করা হয় সায়ানাইড। এসময় জোনস্ সবাইকে দ্রুত এই আত্মহত্যা কার্যক্রম শেষ করার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছিলেন।অবশ্য জোনস্ নিজে সায়ানাইডের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেননি। সায়ানাইড গ্রহণের পর তার অনুসারীদের যে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মাধ্যমে মৃত্যু হচ্ছিল, তা দেখে তিনি ওই রাস্তা বাদ দেন। তার বদলে তিনি মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
পরবর্তীতে গায়ানার সেনাবাহিনী যখন কংগ্রেসম্যানের হত্যাকারীদের ধরতে জোনস্ টাউনে যান, তারা ভেবেছিলেন হয়তো জিম জোনসের অনুসারীরা তাদের ওপর আক্রমণ করে বসবে। কিন্তু কিসের কী! জোনস্ টাউনে পৌঁছার পর তাদের সবার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাবার অবস্থা হয়। যত দূর চোখ যায়, শুধু লাশ আর লাশ। একজন আরেকজনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। যুবক, বৃদ্ধ, নারী, শিশু—কেউ বাদ যায়নি।
যত দূর চোখ যায়, শুধু লাশ আর লাশ
সেদিনের সেই লাশের মিছিলের মধ্যে শিশু ছিল ৩০০ জন, যাদেরকে তাদের পিতামাতা হত্যা করেছিল। বৃদ্ধ নাগরিকের সংখ্যাও ছিল ৩০০ জনের মতো। জোনস্ টাউনের নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় তাদের শরীরে সায়ানাইড প্রবেশ করানো হয়।বাকিরা স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছিল মৃত্যুকে।জোনস্ টাউনের ঘটনাকে গণহত্যা বা গণ-আত্মহত্যা যাই বলা হোক না কেন তা আমেরিকার ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়। ওইদিন যারা মৃত্যুবরণ করেছিল, এমন নয় যে তারা সবাই নিরক্ষর বা চলমান নাগরিক জীবনযাত্রা সম্পর্কে অজ্ঞ। বরং জিম জোনসের অনেক অনুসারীই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তাহলে কেনই বা এত বিপুল সংখ্যক মানুষ শুধুমাত্র একজনের কথায় স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথে পা বাড়িয়ে নিজেকে ধ্বংস করে দিলেন, তা আজও রহস্যময়।
ব র্ষাকাল শুধু প্রকৃতির শান্তি ও সৌন্দর্যের বাহক নয়, একই সঙ্গে এটি রোগব্যাধিরও উৎকৃষ্ট সময়। বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা, অপরিষ্কার পরিবেশ এবং খ...
সর্বশেষ খবরগুলো পড়ুন
SAYEED's BlogSpot is a reliable destination for a mix of diverse blogs. It creates and presents fascinating articles on important and widely discussed topics related to the country and humanity, showcasing research-based findings.