কালের বিবর্তনে বদলাচ্ছে পৃথিবী। বদলাচ্ছে তার রং-ঢং ও পরিবেশ। পিছিয়ে নেই ইসলাম বিরোধিরাও। কৌশল অবলম্বনে তারা সিদ্ধহস্ত। স্বার্থ হাসিলে তাদের লক্ষ্য বস্তু হতে পারে যে কেউ। বিশ্বনবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে বিশ্বমুসলিম যখন উত্তাল, গণধিক্কার ঠেকাতে তখনই ঘটানো হলো মালালা নামের নতুন বিস্ফোরণ।
 |
পশ্চিমাদের পাতা ফাঁদে আটক মুসলিম ললনা |

মালালা ইউসুফজাই। ১৪ বছরের কিশোরী। পাকিস্তানের সোয়াতে তার বাস। পিতা বেসরকারি স্কুলের একজন পরিচালক। বিবিসি উর্দু ব্লগে 'গুল মাকয়ী' ছদ্মনামে লেখালেখি করে সবার কাছে পরিচিত হয় সে। ২০১১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তাকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স পিস প্রাইজের জন্যও মনোনীত হয় মালালা। নোবেল কমিটি কর্তৃক শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
বিগত ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর। স্কুল থেকে ফেরার পথে দুই সহপাঠীসহ মুখোশধারী কিছু লোকের হামলার শিকার হয় মালালা। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় সি এম এইচ ক্লিনিকে। পরে রাওয়াল পিন্ডিতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে গুলিটি বেরিয়ে আসে। আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। তারপরও পূর্ণ সুস্থতার জন্য তাকে নেওয়া হয় যুক্তরাজ্যে, এলিজাবেথ হাসপাতালে। এদিকে মিডিয়া ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গাইতে শুরু করলো মালালা-সাফাই। টার্গেট করা হলো তালেবানদের। সুযোগে তৎপর হয়ে ওঠে তালেবান বিরোধিরা।
 |
বিবিসি উর্দু ব্লগে "গুল মাকাই" ছদ্মনামে মালালা'র ব্লগ; ছবি: [২] |
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী পারভেজ আশরাফ এবং তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। অশ্রুশিক্ত হয়েছেন পপ সম্রাজ্ঞী ম্যাডোনা। ভারতের এক সৈকতে নির্মিত হয়েছে মালালাভাস্কর্য। ১২ অক্টোবর তার সুস্থতার জন্য পালিত হয়েছে দোয়া দিবস। জাতিসংঘ ১০ নভেম্বরকে ঘোষণা দিয়েছে মালালা দিবস হিসেবে। আয়োজনটা দারুণ হয়েছে। মানুষ সহজে গ্রহণ করবে।
মালালা ইউসুফজাই অন্যদের মতো এক কিশোরী। হামলার শিকার সে। হামলাকারীদের সঠিক বিচার হোক; সবার কামনা। কিন্তু তাকে নিয়ে এতো মায়াকান্না কেন? বিশেষকরে পশ্চিমা এবং তাদের দোসরদের?
 |
২০১৩ সালে জাতিসংঘে ভাষণরত মামলা ইউসুফজাই |
কোনো সত্যসন্ধানী বিবেক কৌতূহলী হলে বেরিয়ে আসবে তার মূল রহস্য। প্রথম দিকে অনেকের মত আমার ধারণাও ছিল একই। কারণ, মিডিয়ার একমুখী প্রচারণা। কিন্তু ধারণা পাল্টে দেয় কিছু নিবন্ধ এবং তথ্য-প্রমাণ। ফুটে উঠে তার প্রকৃত চিত্র।
মূলত ১৯ অক্টোবর মালালা ইউসুফজাইয়ের উপর হামলাকারীরা তালেবান নয়; তালেবান নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত। তারা তাহরিকে তালেবান (টিটিপি) নামে পরিচিত। প্রকৃত তালেবান অসহায় কারও উপর বুলেট ছুঁড়ে না। বরং দখলদার দমনে সশস্ত্র সৈনিকের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আফগানিস্তানের চলমান জিহাদই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
পাকিস্তানের বিশিষ্ট লেখক নাজিম সাহেবের মতে মালালা ইউসুফজাইয়ের উপর হামলা ইয়াহুদিদের তৈরি একটি নাটক। নাটকটিতে অভিনেত্রী মালালা আর ভিলেন চরিত্রে কথিত তালেবান। যুক্তরাজ্য লেবার পার্টির নেতা লর্ড নাজির আহমদ বলেন, মালালা পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনার শিকার, তালেবানকে কোণঠাসা করার একটি ইস্যু মাত্র।
১৪/১০/১২ তারিখের 'দি লাহোর টাইমস'-এ প্রকাশিত, মালালার উপর আক্রমণের নেপত্যে রয়েছে সিআইএ। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ফেইসবুকে। সেখানে পোস্ট করা একটি ছবিতে মালালাকে দেখা যায় সিআইএ এজেন্ট বি ইলিক-এর সাথে; পাশে তার বাবা-মা। মালালার পরিবারের সাথে সিআইএ-র সম্পৃক্ততার আরও প্রমাণ মেলে বিবিসি ব্লগে লেখা তার কিছু নোট থেকে। ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি লেখা তার একটি নোটের প্রারম্ভ ছিলো এরূপ ' প্রিন্সিপাল স্যার ইউনিফর্ম পরতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন বোরকা পরতে। আমার তো বোরকা পরা মেয়েদের দেখলে প্রস্তর যুগের কথা মনে হয়। আর দাড়িওয়ালাদের দেখলে ফেরাউনের কথা '। তাছাড়াও এক টেলিভিশন-সাক্ষাৎকারে সে বলেছে, ' বারাক ওবামা আমার আদর্শ '। এক মুসলিম মেয়ের মুখে শরিয়তের অত্যাবশ্যকীয় এ-সব বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কথার পেছনে যে সিআইএ-র মতো অপশক্তির ইন্ধন রয়েছে তা স্পষ্ট। নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তানে খেলতে না যাওয়ায় মালালা তাদেরকে বিড়ালের বাচ্চা বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে।
আচ্ছা গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যানুযায়ী, মালালার ন্যায় অসহায় শিক্ষানুরাগীকে যে সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সে সরকার কীভাবে পুরো একটি ক্রিকেট দলকে নিরাপত্তা দেবে? এতেও কি প্রমাণিত হয় না, সে সাজানো সেই নাটকের অভিনেত্রী? মালালার উপর হামলার কারণে অনেকেই প্রতিবাদে নেমেছেন। মূলত পশ্চিমাদের টোপ গিলেছেন। টোপ এজন্যই বলছি, এর চাইতেও ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিশ্বব্যাপী বহু আসহায় নারী।
খোদ পাকিস্তানেরই অধিবাসী ড. আফিয়া সিদ্দিকার উপর চালানো হয়েছে অমানবিক অত্যাচার। তখন মিডিয়া থেকে শুরু করে এ-সব প্রতিবাদীদের সবাই ছিলেন নিশ্চুপদের দলে। হাজারো নির্যাতিতা নারীর আর্তনাদ যেখানে তাদের জাগ্রত করতে পারেনি, সেখানে এক মালালার ধর্ম নিরপেক্ষতা বাজিমাত করে দিয়েছে। সত্যিই এ-যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। যার ছোঁয়ায় দুঃস্বপ্ন আজ বাস্তবের দ্বার-প্রান্তে!
ছবি ও তথ্যসূত্র:
ছবি: ১. The United Nations website
ছবি: ২. https://www.sutori.com/en/story/i-am-malala-timeline--8pqRakZEyLZdict97iiGmxr7