পাকিস্তানের যে গ্রামে রয়েছে ঘরে ঘরে ইউটিউবার, হাতে হাতে ইউটিউব প্লে বাটন

পাকিস্তানের রাহিমইয়ার জেলায় রয়েছে এমন এক গ্রাম যেখানে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সকলেই ইউটিউবার। গ্রামটির প্রতিটি ঘরেই রয়েছে সিলভার ও গোল্ডেন প্লে বাটন। বলছিলাম পাকিস্তানের দাড়ি আজিম খান গ্রামের কথা। যে গ্রামের বাসিন্দাদের মুল পেশা হলো ইউটিউবিং। বর্তমানে গ্রামটিতে প্রায় ২০০ টিরও বেশি ইউটিউব প্লে বাটন রয়েছে। 

পাকিস্তানের যে গ্রামে রয়েছে ঘরে ঘরে ইউটিউবার

মুলত হায়দার আলী নামক এক যুবকের হাত ধরেই দাড়ি আজিম খান গ্রামটি ইউটিউবারদের গ্রামে পরিণত হয়েছে। প্রায় বছর দেড়েক আগে হায়দার আলী হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে ইউটিউবিং শুরু করেছিলেন। তার প্রথম চ্যানেলের নাম হলো ইসলামিক বেস। 

শুরুর দিকে পাড়া প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকেরা তাকে ব্যাপক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেও হায়দার তার স্বপ্ন পূরণে অটল ছিলেন এবং প্রায় ২ মাস পর তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেটিতে ৭ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ হয়েছিল। 

ব্যাস এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের স্বপ্নের ইউটিউব চ্যানেলগুলো জীবন বদলে দেয় হায়দারের।  ইউটিউবে হায়দারের এমন অভাবনীয় সাফল্য দেখে পরবর্তীতে গ্রামের বাকি বাসিন্দারাও ইউটিউবিং শুরু করে। 

বর্তমানে গ্রামটির সকল বাসিন্দারাই নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় রাতারাতি কিভাবে একটা গ্রামের চেহারা বদলে যায় তার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো পাকিস্তানের এই ভাইরাল ইউটিউব গ্রাম! 

পাকিস্তানের জনপ্রিয় ইউটিউবার হায়দার আলি

হায়দার আলীর মতো একজন উদ্যোগী ব্যক্তি তার সৃজনশীলতা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন, সঠিক প্ল্যাটফর্ম এবং পরিকল্পনা থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়। তার ইসলামিক বেস চ্যানেলের সাফল্য শুধু তাকে নয়, পুরো গ্রামকেই প্রভাবিত করেছে। ভাইরাল ভিডিওর মাধ্যমে তিনি যে সাফল্য অর্জন করেন, তা অন্যান্যদের অনুপ্রাণিত করে ইউটিউবিং শুরু করতে।  

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাহিমইয়ার খান জেলার এই "ইউটিউব গ্রাম" দারুণ এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রযুক্তি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে আর্থিক উন্নতির। দাড়ি আজিম খান নামের এই গ্রামে প্রতিটি ঘরে ইউটিউব প্লে বাটন থাকা শুধু একটি অনন্য ঘটনা নয়, বরং এটি প্রমাণ যে একক উদ্যোগ কিভাবে পুরো সম্প্রদায়ের জীবনমান বদলে দিতে পারে।  

সেই গ্রামেরই জনপ্রিয় খুদে ইউটিউবার সারা ইউটিউব জুড়ে সাড়া ফেলেছিল। মোহাম্মদ সিরাজী আর মুসকান দুই ভাই বোন। তাদের বয়স কত হবে? সিরাজী আট-নয় হবে, আর মুসকান পাঁচ ছয় বছর বয়স।

পাকিস্তানের জনপ্রিয় ক্ষুদে ইউটিউবার মোহাম্মদ সিরাজ ও তার ছোট বোন মুসকান

এ দুই ভাই-বোন একটা ক্যামেরা ফোন দিয়ে নিজেদের দৈনন্দিন জীবন ভিডিও করে আর ইউটিউবে পোস্ট করে সিরাজী ভিলেজ ব্লগ নামে। তারা পাকিস্তানের দূর্গম গিলগিট বাল্টিস্তান পাহাড়ী অঞ্চলের মধ্যে সিয়াচিন গ্লেসিয়ারের গা ঘেঁষে অনেক খাঁড়া, ঢালু ও উঁচু একটা গ্রামে থাকে। তাদের ভিটে বাড়ি দেখে বোঝা যায়, তারা হতদরিদ্র কৃষক পরিবার। কিন্তু কোনো ভিডিওতেই তাদের বাবা-মাকে দেখা যায় না। তবে এই দুই ভাই-বোনের পোশাক-আশাক ও তাদের শিশুসুলভ সুন্দর আচরণ দেখে বোঝা যায়, সভ্যতার বাইরের প্রত্যন্ত গ্রামের শিশু হলেও তারা খুব পিতা-মাতার যত্নে বড় হচ্ছে। 

সম্ভবত সিরাজের বাবা সিরাজকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে। তাদের গ্রামে ইন্টারনেট নেই। এক ঘণ্টা পায়ে হেঁটে বাইরের সভ্যতায় এসে ভিডিওগুলো আপলোড করে সম্ভবত সিরাজের বাবা। 

সিরাজ আর মুসকান এই বয়সেই সাবলীলভাবে দ্বিভাষিক বালতি (বাল্তিস্থান) আর উর্দু ভাষায় কথা বলে। যদিও সিরাজ আর মুসকান উর্দুতে কথা বলে তাদের ভিডিও গুলোতে। কোনো কারণে তাদের উর্দুটা খুব সহজেই বোঝা যায়, আর উর্দু অনেকটা বাংলার খুব কাছাকাছি। 

এখন, এই গ্রামটি শুধুমাত্র ইউটিউবিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে না, বরং এটি প্রযুক্তির সাহায্যে সামাজিক পরিবর্তনের এক উদাহরণ হিসেবেও পরিচিত। এটি দেখিয়ে দেয়, সৃজনশীলতা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মানুষের জীবনধারায় কতোটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

Next Post Previous Post
📢 আপনার ব্র্যান্ড/প্রতিষ্ঠানের কথা জানুক হাজারো অনলাইন পাঠক আজই বিজ্ঞাপন দিন 🛍️
DMCA.com Protection Status